চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ ভাষা শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছেন, যত দেশের যত ভাষাই হোক, আমরা যেভাবে আমাদের মনের ভাষা প্রকাশ করি, অন্য কোনো ভাষাতে কি সেটা করা সম্ভব? কখনই সম্ভব না। মাতৃভাষা স্রষ্টার এক অনবদ্য দান। এটি আমাদের জন্মসূত্রে পাওয়া এবং এটি আমাদের অস্তিত্বের সাথে জড়িয়ে আছে। মাতৃভাষা অনবদ্য একটি বিষয় প্রত্যেকটি জাতির জন্যে এবং এটি একটি জাতিস্বত্বার পরিচয়ও বটে।
২১ ফেব্রুয়ারি রোববার সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন কর্তৃক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, ১৯৫২ থেকে আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি ২০২১ সাল। ৬৯ বছর ব্যবধানের বিশাল একটি সময়। যদি আজকে আমাদের ভাষা আন্দোলনের কথা বলতে হয়, তাহলে আমাদের পিছনে ফিরে তাকাতে হবে। কারন এই ’৫২ আমাদের জাতিস্বত্বার প্রতীক। আমাদের প্রথম প্রতিবাদ হয়েছিলো এই ’৫২-তে। তখন বাঙালি বুঝতে পেরেছিলো, তারা একটি পৃথক জাতিস্বত্বা। তাদের চেতনা, তাদের ভাব প্রকাশের ভঙ্গি সবই ভিন্ন। ’৫২-ই বাঙালি জাতিকে একত্রিত করেছিলো। ’৫২ থেকেই পর্যায়ক্রমে ’৭১-এ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ।
জেলা প্রশাসক বলেন, হ্যাঁ, আমরা পেয়েছি, আমরা স্বাধীন হয়েছি, আমরা আমাদের ভাষাকে অর্জন করেছি এবং আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। ’৯৯ সালে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে এবং ২০০০ সাল থেকে আমরা তা পালন করে আসছি। কিন্তু এতোটুকুতে সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না। কারন ২০০৯ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীতে ৬ হাজার ৯শ’ ৯টি ভাষা রয়েছে এবং কালক্রমে বিভিন্ন ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। আর বিশ্বে ৪০% লোক মাত্র ২৩টি ভাষায় কথা বলে, যার মধ্যে বাংলাভাষার অবস্থান জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৭ম এবং ২৭ কোটি লোক বাংলা ভাষায় কথা বলছে। যদিও এ ভেবে মনে করি, আমরা বিরাট অবস্থানে আছি, তা কিন্তু নয়।
তিনি আরো বলেন, আমাদের ভাষা আমরা নিজেরাই বিকৃতি করছি। নিজের ভাষাকে নিজেরাই ছোট করছি। বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে একটি অদ্ভুত ভাষা তৈরি করে ফেলছি। যেটা আমাদের ভাষা নয়। একটু সচেতনতার অভাবে এ ধরনের ভুল হচ্ছে। আমাদের এ ধরনের ভুল দেখে পরবর্তী প্রজন্মরাও ভুল শিখবে। সেজন্যই আমাদের সচেতনতার পাশাপাশি বাংলাকে চর্চা করতে হবে। আমরা যদি চর্চা না করি তাহলে কালক্রমে বাংলাভাষা হারিয়ে যাবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের সঞ্চালনায় আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কাজী আব্দুর রহিম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অসিত বরণ দাশ, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, পুরাণবাজার ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রতন কুমার মজুমদার। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সাহিত্য একাডেমির মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত, বিশিষ্ট ছড়াকার ডা. পীযুষ কান্তি বড়ুয়া, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সভাপতি কর্ণরাজ ত্রিপুরা প্রমুখ।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মানিক, উজ্জ্বল হোসাইন, ইমরান মাহমুদ ডালিম, আজিজুন্নাহার, এ.আর. এম. জাহিদ হাসান, কাজী মোঃ মেশকাতুল ইসলাম, রেশমা খাতুন, রিক্তা খাতুন, দেবযানী করসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ।
আলোচনার শুরুতে মহান শহিদদের স্মরনে ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ ও মিলনায়তনে উপস্থিত দর্শকরা।
পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত কালেক্টরেট জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোঃ মোশারফ হোসাইন ও গীতা পাঠ করেন শুভ্র রক্ষিত।